Class Five : Bangladesh and Global Identity

আমাদের মুক্তিযুদ্ধ: |

অনুচ্ছেদ ১

 

১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ আমাদের জাতীয় ইতিহাসে অত্যন্ত গৌরবময় ঘটনা। মুক্তিযুদ্ধের পূর্বের অনেক আন্দোলন ও সংগ্রামের ইতিহাস আমরা ইতোপূর্বে জেনেছি। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি ঘটনা নিচের ছকে পড়ি।

 

১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন।

১৯৬৬ সালের ৬ দফা আন্দোলন

১৯৬৯ সালের গণ-অভ্যুত্থান।

১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ বিজয়।

১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চের রাতে পাকিস্তানি বাহিনীর নারকীয় গণহত্যা।

১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষনার মাধ্যমে মহান মুক্তিযুদ্ধের শুরু।

 

১৯৪৭ সালের পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্মের পর থেকে শুরু করে দীর্ঘ ২৩ বছর পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী পূর্ব পাকিস্তানের জনগণকে শাসন ও শোষণ করে। এই শাসন ও শোষণের হাত থেকে চূড়ান্ত মুক্তির লক্ষ্যে ১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ শুরু হয় আমাদের মুক্তিযুদ্ধ। এই যুদ্ধের অবিসংবাদিত নেতা ছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তাঁর আহবানেই বাঙালি জাতি পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে এক রক্তক্ষয়ী স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। কৃষক, শ্রমিক, ছাত্র, শিক্ষক, সশস্ত্র বাহিনীর বাঙালি সদস্যসহ সর্বস্তরের নারী-পুরুষ এই যুদ্ধে অংশ নেয়। দীর্ঘ ৯ মাস যুদ্ধের পর ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে আমাদের চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হয়। বিশ্বের মানচিত্রে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে। 

 

অনুচ্ছেদ ২

 

মুজিবনগর সরকার গঠন

মুক্তিযুদ্ধের কিছুদিনের মধ্যেই ১৯৭১ সালের ১০ই এপ্রিল গঠিত হয় প্রথম বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকার যা মুজিবনগর সরকার নামে পরিচিত। ১৭ই এপ্রিল মেহেরপুর জেলার বৈদ্যনাথতলা (বর্তমান উপজেলা মুজিবনগর) গ্রামের আমবাগানে এই সরকার শপথ গ্রহণ করে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এই সরকারের রাষ্ট্রপতি নিযুক্ত হন। কিন্তু তিনি তখন পশ্চিম পাকিস্তানে কারাগারে বন্দী। তাঁর অনুপস্থিতিতে উপ-রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন। তাজউদ্দীন আহমদ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা এবং দেশে ও বিদেশে এই যুদ্ধের পক্ষে জনমত গড়ে তোলা ও সমর্থন আদায় করার ক্ষেত্রে এই সরকার গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে। এই সরকার গঠনের পর থেকে অগণিত মানুষ দেশকে মুক্ত করার জন্য সশস্ত্র সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ে।

 বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান

 

সৈয়দ নজরুল ইসলাম 

তাজউদ্দীন আহমদ 

 

অনুচ্ছেদ ৩

 

মুক্তিবাহিনী

মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনার জন্য মুজিবনগর সরকারের উদ্যোগে ১৯৭১ সালের ১১ই জুলাই মুক্তিবাহিনী গঠন করা হয়। কর্ণেল (পরবর্তিতে জেনারেল) মুহম্মদ আতাউল গণি ওসমানীকে মুক্তিবাহিনীর প্রধান সেনাপতি এবং গ্রুপ ক্যাপ্টেন এ.কে.খন্দকারকে মুক্তিবাহিনীর উপপ্রধান সেনাপতি নিযুক্ত করা হয়। লে.কর্ণেল আব্দুর রব সেনাবাহিনীর প্রধান নিযুক্ত হন। মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনার সুবিধার জন্য এসময় সারা বাংলাদেশকে ১১টি সেক্টরে ভাগ করা হয়। নিচের মানচিত্রে এক নজরে ১১টি সেক্টরের অবস্থান দেখে নিই।

জেনারেল মুহম্মদ আতাউল গণি ওসমানী

সেক্টর ১ :চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম এবং ফেনী নদী পর্যন্ত।

সেক্টর ২ :নোয়াখালী,কুমিল্লা,আখাউড়া,ভৈরব এবং ঢাকা ও ফরিদপুর জেলার অংশবিশেষ। 

সেক্টর ৩ :আখাউড়া,ভৈরব রেললাইন থেকে পূর্বদিকে কুমিল্লা জেলা, হবিগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ ও ঢাকা জেলার অংশবিশেষ।

সেক্টর ৪ :সিলেট জেলার পূর্বাঞ্চল,খোয়াই,শায়েস্তাগঞ্জ রেললাইন থেকে পূর্ব ও উত্তর দিকে ডাইউকি সড়ক।

সেক্টর ৫ :সিলেট জেলার পশ্চিম এলাকা এবং সিলেট ডাইউকি সড়ক থেকে সুনামগঞ্জ এবং বৃহত্তর ময়মনসিংহের সীমান্তবর্তী অঞ্চল।

সেক্টর ৬ :ব্রহ্মপুত্র নদের তীরবর্তী অঞ্চল ব্যতীত সমগ্র রংপুর জেলা ও ঠাকুরগাঁও।

সেক্টর ৭ :সমগ্র রাজশাহী,ঠাকুরগাঁও ছাড়া দিনাজপুরের অবশিষ্ট অংশ এবং ব্রহ্মপুত্র নদের তীরবর্তী এলাকা ব্যতীত সমগ্র পাবনা ও বগুড়া জেলা।  

সেক্টর ৮ : সমগ্র কুষ্টিয়া ও যশোর জেলা, ফরিদপুরের অংশবিশেষ এবং দৌলতপুর সাতক্ষীরা সড়ক পর্যন্ত খুলনা জেলার এলাকা।

সেক্টর ৯ : সাতক্ষীরা দৌলতপুর সড়কসহ খুলনা জেলার সমগ্র দক্ষিণাঞ্চল এবং বৃহত্তর বরিশাল ও পটুয়াখালী জেলা।

সেক্টর ১০ :অভ্যন্তরীণ নৌপথ ও সমুদ্র উপকূলীয় অঞ্চল, চট্টগ্রাম ও চালনা।

সেক্টর ১১ : কিশোরগঞ্জ ব্যতীত সমগ্র ময়মনসিংহ অঞ্চল।

সেক্টরগুলোর অধীনে ছিল বেশ কয়েকটি সাব-সেক্টর। এছাড়াও মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গনকে ভাগ করা হয়েছিল তিনটি ব্রিগেড ফোর্সে। এগুলো হলো ‘জেড ফোর্স’, ‘এস ফোর্স’ এবং ‘কে ফোর্স’। মেজর জিয়াউর রহমান ‘জেড ফোর্স’, মেজর কে.এম. শফিউল্লাহ ‘এস ফোর্স’ ও মেজর খালেদ মোশাররফ ‘কে ফোর্স’ এর অধিনায়ক ছিলেন। তাছাড়া মুক্তিযুদ্ধের শেষ দিকে গঠিত হয় বাংলাদেশ লিবারেশন ফোর্স বা বি. এল.এফ।

সামরিক ও বেসামরিক জনগণের মিলিত অংশগ্রহণের মাধ্যমে মুক্তিবাহিনী গড়ে উঠেছিল। বাঙালি সামরিক অফিসার ও সৈন্যদের নিয়ে গঠিত ছিল মুক্তিবাহিনীর নিয়মিত বাহিনী। এদের বলা হতো ‘মুক্তিফৌজ’। আর বেসামরিক সর্বস্তরের জনগণ নিয়ে গড়ে উঠেছিল অনিয়মিত বাহিনী। এছাড়া, দেশের অভ্যন্তরে আঞ্চলিক পর্যায়ে অন্যান্য বেশ কিছু ছোট ছোট বাহিনী গড়ে ওঠে। এর মধ্যে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর নেতৃত্বে ‘কাদেরিয়া বাহিনী’ এবং মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার নেতৃত্বে ‘মায়া বাহিনী’ উল্লেখযোগ্য। দেশের অভ্যন্তরে এবং ভারতের বিভিন্ন স্থানে মুক্তিযোদ্ধারা যুদ্ধের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। অনেক নারীও এসময় যুদ্ধের প্রশিক্ষণ নেন। গেরিলা আক্রমণ ও সম্মুখ যুদ্ধ ছিল প্রধান যুদ্ধ কৌশল। এভাবে যুদ্ধের নয় মাস ধরে মুক্তিবাহিনীর নির্ভীক অদম্য প্রতিরোধ ও আক্রমণ গড়ে তোলে।

যুদ্ধরত মুক্তিযোদ্ধাগণ

যুদ্ধের সময় এদেশের অগণিত সাধারণ মানুষ নিজেদের জীবন বিপন্ন করে মুক্তিবাহিনীর পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। থাকা, খাওয়া, তথ্য ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় সাহায্য দিয়ে মুক্তিবাহিনীকে লড়াই চালিয়ে যেতে তারা উদ্বুদ্ধ করেছিলেন। এসব কাজে নারীদের বিশেষ ভূমিকা ছিল। সংস্কৃতি কর্মীরাও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। এদেশের ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীরাও সক্রিয়ভাবে এ যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। এভাবে সব বিপদ তুচ্ছ করে মুক্তিবাহিনী ও বাংলার অগণিত মুক্তিকামী জনতা শহরে, গ্রামে যে যেভাবে পেরেছিল রুখে দাঁড়িয়েছিল। সকলের মিলিত অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধ ব্যাপক রূপ লাভ করে। 

নারী মুক্তিযোদ্ধা

‘জয় বাংলা’ ধ্বনি ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে সবচেয়ে প্রিয়। এই স্লোগান দিয়ে তারা যুদ্ধক্ষেত্রে বিজয় উল্লাস প্রকাশ করত। এর মধ্য দিয়েই তাঁরা রণক্ষেত্রে একে অপরের অবস্থান সম্পর্কে জানাতো। ‘জয় বাংলা’ ধ্বনি শুনলে পাক হানাদারদের বুক ভয়ে কেঁপে উঠতো।

 

অনুচ্ছেদ ৪

 

পাকিস্তানি বাহিনীর হত্যাযজ্ঞ

যুদ্ধের প্রথম থেকেই পাকিস্তানি বাহিনী বাঙালি নিধনে চরম নিষ্ঠুরতার পথ অবলম্বন করে। ২৫শে মার্চ রাতের অন্ধকারে নিরীহ বাঙালিদের উপর অতর্কিত হামলার মধ্য দিয়ে পাকিস্তানি বাহিনীর হত্যাযজ্ঞ শুরু হয়। এই অভিযানের নাম দেয়া হয়েছিল ‘অপারেশন সার্চলাইট’। সেদিন এক রাতেই ঢাকাসহ সারা দেশে হাজার হাজার নিরস্ত্র বাঙালিকে নির্বিচারে হত্যা করা হয়। পরবর্তী নয় মাস ধরেই পাকিস্তানি বাহিনীর এই পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড অব্যাহত থাকে। পাশাপাশি তারা চালায় নির্বিচার লুটতরাজ ও ধর-পাকড়। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেয়া হয়। নারী, পুরুষ, শিশু, বৃদ্ধ কাউকেই রেহাই দেয়নি পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। তারা লক্ষ লক্ষ মানুষকে হত্যা করে সারাদেশের অগণিত স্থানকে বধ্যভূমিতে পরিণত করে। পাকিস্তানি বাহিনীর হত্যা, লুন্ঠন ও অত্য্যাচারের মুখে প্রাণভয়ে মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে পালাতে শুরু করে। এসময় প্রায় এক কোটির বেশি মানুষ ভারতে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নেয়।

লোকজন ঘরবাড়ি ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে যাচ্ছে

বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষই ছিল স্বাধীনতার পক্ষে। তারপরেও এদেশের কিছু মানুষ মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করে পাকিস্তানি বাহিনীর সহযোগী হিসেবে কাজ করে। এদের কয়েকটি প্রধান সংগঠনের মধ্যে ছিল শান্তি কমিটি, রাজাকার, আলবদর ও আল-শামস। এর মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবারের সদস্য এবং মুক্তিযুদ্ধের সমর্থক সাধারণ মানুষের নামের তালিকা তৈরি করে হানাদারদের দিয়েছিল। এছাড়া পথ-ঘাট চিনিয়ে, ভাষা বুঝিয়ে পাকিস্তানী বাহিনীকে নির্যাতন-তান্ডব চালাতে সাহায্য করে। এদের অত্যাচার কখনো কখনো পাকিস্তানি বাহিনীকেও হার মানিয়েছিল।

পাকিস্তানি বাহিনী ও রাজাকারদের অত্যাচার নির্যাতন

মুক্তিযুদ্ধের শেষের দিকে পরাজয় নিশ্চিত জেনে পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের দেশীয় দোসররা এদেশকে মেধাশূন্য করার পরিকল্পনা করে। ১০ই ডিসেম্বর থেকে ১৪ই ডিসেম্বরের মধ্যে তারা আমাদের অনেক জ্ঞানী-গুনী শিল্পী, সাহিত্যিক, শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী, চিকিৎসক, সাংবাদিকদের ধরে নিয়ে হত্যা করে। এদের মধ্যে রয়েছেন অধ্যাপক গোবিন্দচন্দ্র দেব, অধ্যাপক মুনীর চৌধুরী, অধ্যাপক জ্যোতির্ময় গুহ ঠাকুরতা, অধ্যাপক সন্তোষ চন্দ্র ভট্টাচার্য, অধ্যাপক মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, অধ্যাপক আনোয়ার পাশা, অধ্যাপক রাশীদুল হাসান, সাংবাদিক সেলিনা পারভিন, ডা.আলীম চৌধুরী,ডা.ফজলে রাব্বী,ডা.গোলাম মর্তুজা,ডা.আজহারুল হক এবং আরও অনেকে। এসব শহিদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে আমরা প্রতিবছর ১৪ই ডিসেম্বর ‘শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস’ পালন করি।

 

অনুচ্ছেদ ৫

 

পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণ

নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ড ও অত্যাচার নির্যাতন চালিয়ে পাকিস্তানি বাহিনীর শেষ রক্ষা হয়নি। আমাদের লড়াকু মুক্তিবাহিনীর একের পর এক আক্রমণে তারা দিশেহারা হয়ে পড়ে। ১৯৭১ সালের নভেম্বর, ডিসেম্বর মাসের দিকে যুদ্ধ প্রবল আকার ধারণ করে। যুদ্ধের শুরু থেকেই প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত আমাদের অনেক সাহায্য ও সহযোগিতা দিয়েছিল। বিশেষকরে প্রাণভয়ে আশ্রয়গ্রহণকারী শরণার্থীদের ভারত সরকার খাদ্য, বস্ত্র, আশ্রয় এবং চিকিৎসা সেবা দিয়ে সাহায্য করে। যুদ্ধের শেষের দিকে তারা সামরিক শক্তি দিয়েও সহায়তা করে। যুদ্ধকালীন ভারতীয় এই সহায়তাকারী বাহিনীকে মিত্রবাহিনী বলা হতো। মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর সমন্বয়ে ১৯৭১ সালের ২১শে নভেম্বর একটি যৌথবাহিনী গঠন করা হয়। পাকিস্তান ৩রা ডিসেম্বর ভারত আক্রমণ করলে, যৌথবাহিনী একযোগে স্থল, নৌ ও আকাশ পথে আক্রমণ করে। তীব্র আক্রমণে পাকিস্তানি বাহিনী অবশেষে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়। ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর বিকালে পাকিস্তানি বাহিনীর প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল নিয়াজী যৌথ বাহিনীর প্রধান লে.জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরার কাছে ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে আত্মসমর্পণ করে দলিলে স্বাক্ষর করেন। জন্ম লাভ করে ‘বাংলাদেশ’ নামে একটি নতুন স্বাধীন দেশ। সেই থেকে প্রতিবছর ১৬ই ডিসেম্বর আমরা বিজয় দিবস পালন করি। 

পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণ

মুক্তিযোদ্ধাদের বিজয় উল্লাস

 

অনুচ্ছেদ ৬

 

যুদ্ধের ক্ষয়ক্ষতি

মাত্র নয় মাস যুদ্ধের মাধ্যমে একটি দেশের স্বাধীন হওয়ার ঘটনা পৃথিবীতে বিরল। কিন্তু অল্প সময় হলেও, এই যুদ্ধ ছিল রক্তক্ষয়ী। সম্পদ হানি ও অন্যান্য ক্ষয়ক্ষতি ছিল সীমাহীন ও অপূরণীয়। প্রায় ৩০ লক্ষ মানুষ এতে প্রাণ হারায়, আহত হয় আরও কয়েক লক্ষ মানুষ। এক কোটির অধিক মানুষ ঘর ছাড়া হয়। পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের সহযোগীরা অগণিত বাড়ি-ঘর, দোকানপাট পুড়িয়ে দেয়। ধ্বংস করে রাস্তা-ঘাট, সেতু ও বন্দর। বন্ধ হয়ে যায় স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, ব্যাংক, অফিস, কারখানা ইত্যাদি। সবমিলিয়ে ‘সোনার বাংলা’ প্রায় নিঃস্ব হয়ে পড়ে।

যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের হার্ডিঞ্জ ব্রীজ

 

অনুচ্ছেদ ৭

 

মুক্তিযুদ্ধের তাৎপর্য

মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমেই আমরা আমাদের এই দেশটি পেয়েছি। এর ফলেই পৃথিবীর বুকে আজ আমরা একটা স্বাধীন দেশের নাগরিক। আমরা পেয়েছি নিজস্ব একটা ভূ-খণ্ড, একটা নিজস্ব পতাকা। জাতি-ধর্ম-বর্ণ, নারী, পুরুষ নির্বিশেষে সকলে এই মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ তাই সবার। এই স্বাধীন দেশে তাই সবার রয়েছে সমান অধিকার। এই দেশটাকে সুন্দর করে গড়ার দায়িত্বও আমাদের সবার।

সেই সাথে মনে রাখতে হবে মুক্তিযুদ্ধে বহু মানুষের আত্মত্যাগের কথা। ভুললে চলবে না সেসব লক্ষ লক্ষ মুক্তিযোদ্ধার কথা যাঁরা জীবনপণ করে যুদ্ধ করেছিলেন, শহিদ হয়েছেন বা আহত হয়ে বেঁচে আছেন। সাধারণ মানুষ যারা মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্য করেছেন তাদের অবদানও অনেক। মুক্তিযোদ্ধাদের মতো আমরাও সবসময় দেশকে ভালোবাসব।

 

মুক্তিযোদ্ধাদের রাষ্ট্রীয় উপাধি

মুক্তিযুদ্ধে বীরত্ব ও সাহসিকতার অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে বাংলাদেশ সরকার কতগুলো বীরত্বসূচক রাষ্টীয় উপাধি প্রদান করেছে। এগুলো হলোঃ

১.বীরশ্রেষ্ঠঃ এটি সর্বোচ্চ বীরত্বসূচক পুরস্কার। মুক্তিযুদ্ধে অসীম সাহসিকতার সাথে যুদ্ধ করতে গিয়ে যাঁরা শহিদ হয়েছেন এটি তাঁদেরকে দেয়া হয়েছে। এপর্যন্ত সাত জন এ খেতাবে ভূষিত হয়েছেন।

২.বীর-উত্তমঃ মুক্তিযদ্ধে সাহসিকতা ও ত্যাগের জন্য প্রদত্ত এটি দ্বিতীয় বীরত্বসূচক পুরস্কার।

৩.বীর-বিক্রমঃ মুক্তিযদ্ধে সাহসিকতা ও ত্যাগের জন্য দেয়া এটি তৃতীয় বীরত্বসূচক পুরস্কার।

৪.বীর-প্রতিকঃ মুক্তিযদ্ধে সাহসিকতা ও ত্যাগের জন্য এটি চতুর্থ বীরত্বসূচক পুরস্কার।

 

৭ জন বীরশ্রেষ্ঠ

সিপাহী হামিদুর রহমান

ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মতিউর রহমান

স্কোয়াড্রন লিডার রুহুল আমিন

সিপাহী মোস্তফা কামাল

ল্যান্স নায়েক মুন্সি আব্দুর রউফ

ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর

ল্যান্স নায়েক নূর মোহাম্মদ শেখ

আমাদের মুক্তিযুদ্ধে অসংখ্য মানুষ অবদান রেখেছেন। আমরা তাঁদের সকলকে শ্রদ্ধা করি।

GO TOP